ছাতিমের লু হাওয়ায় তোমার কথা মনে পড়ে, মা৷ মাঝেমধ্যে এমন মনে হয়, এই নিরাক পড়া দুপুরের সব হাওয়াকেই আমার ছাতিমের হাওয়া লাগে! আমার বিজন ঘরে দুপুরবেলায় কেন এই হাওয়া আসে? আমিতো তোমার থেকে কত দূরে! এত দূরে যে, এক জনমেও সে পথ ঘোঁচে না৷ তবু হাওয়া আসে, হাওয়া আসে হৃদয় ক্লান্ত করা, আর আমার নিঃস্ব হৃদয়ে তোমার কণ্ঠ ভাসে৷ তেমন বিশেষ কিছু না, হয়তো তোমার সাধারণ কথোপকথন "কেমন আছিস", " কবে আসবি", "এদিকে আয়" "একটু দেখে যা" - বিবিধ৷ অথচ এখন শূণ্যস্থানের শূণ্যতা ছাড়া কোথাও আর কোনো স্বর নাই৷ আচ্ছা, আমি কি তবে তোমার কণ্ঠ ভুলে গেছি, মা? না না এ হয়না৷ তবে যে সুর জমে থাকে স্মৃতির কোণায়, আমার ভ্রম হয়, সে স্বর তোমারই তো! নাকি আমি গুলিয়ে ফেলি সন্দেহের অভ্যাসে৷ স্মৃতির সেই ঝাপসা সুর আমি কীসের সাথে মিলিয়ে বুঝব সে তুমিই! তুমি তো নাই মা, তুমি তো নাই৷ অথচ তুমি চলে যাবার পর আমি তো তোমার পবিত্র কবরের কাছের ছাতিম গাছটাও হতে পারতাম! পারলে তোমাকে ছায়া দিতাম, দিতাম শিতল-পাটি, আদর বুলানো হাওয়া৷ অথচ দেখো, তোমাকে হারায় আমি হয়ে গেছি একটা ভগ্ন-ভস্ব হৃদয়, দুপুরের ছাতিম হাওয়া যার গায়ে এসে লাগলে বিরহের দালানের মত যে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে শুধু৷
যাক, তুমি তো দেখো না এসব, দেখ কি? না দেখাই বোধহয় ভালো৷ আমার সকল ক্লান্তির ভারের বিনিময়ে হলেও তুমি থাকো ভারমুক্ত, আমার একান্ত রবের কাছে এর চেয়ে বেশী আর কী চাওয়ার আছে?
তবু এই না থাকার ভেতরেও তোমায় চোখে চোখে রাখি মা৷ চোখে চোখে রাখি তোমার না থাকাকেই৷ তুমি চলে যাওয়ার পর আমার জীবন যেন সেই বিষন্ন জানালার ধারেই বসে থাকে সারাক্ষণ, যে জানালা দিয়ে তোমার পবিত্র কবর দেখা যায়৷