পনেরো সালের ডিসেম্বর মাস। বার্ষিক পরীক্ষার হল।পরীক্ষার খাতা বিলি করার সময়। আমাকে কেউ একজন সাগর নামে ডাক দিল। হলের শিক্ষক রাগ হলেন। ধমক দিলেন। তারপর আমাকে দাঁড় করালেন। বললেন, এই তোর পুরো নাম বল। বললাম, আমজাদ হোসেন সাগর। স্যার সবার দিকে লক্ষ্য করলেন। আজ থেকে তার নাম আমজাদ হোসেন। সাগর শব্দটা বাদ। তাকে কেউ আর সাগর বলে ডাকবি না। জানিস? আমজাদ হোসেন নামের অর্থ? সম্মানিত ব্যক্তি। এছাড়া দেশের প্রথম সারির একজন গুণী ব্যক্তির নাম আমজাদ হোসেন। তিনি একাধারে লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালক। বললেন শিক্ষক।
এবার মনে বিঁধল আমজাদ হোসেনের নাম। সন্ধ্যা নামতেই জানতে শুরু করি। জানতে চাইলে প্রথমেই জানতে পারি তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সহযোগী সংগঠন (জাসাস) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। রাজনীতির সাথে জড়িত। ঊনসত্তুর ও একাত্তরের সাথেও ছিল স্পষ্ট সম্পর্ক। মুক্তিযুদ্ধের চিত্র থেকে আবিষ্কার করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্প ও উপন্যাস। প্রখ্যাত একজন চলচ্চিত্রকার, নাট্যকার, গল্পকার ও ঔপান্যাসিক হিশেবে ভূষিত হোন বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরুষ্কার পেয়ে। সাহিত্যে তাঁর বিরাট অবদান।
এই পর্যন্তই শেষ জানা হয়েছে। ওটুকুই। সময় গড়িয়ে গেল। আর জানা হয়নি। হুট করে বছর তিন পার হয়ে গেল। সেদিন বুধবার। ভোর বেলার ওয়াক্ত। দৈনিক ইত্তেফাক। পত্রিকায় দেখি চেনা নাম আমজাদ হোসেন ইশকেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত। হসপিটালে ভর্তি। এই মুহূর্তে প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা। যেতে হবে দেশের বাইরে। আর্থিক সমস্যা থাকায় পিছুটান দেয় পরিবার। কিন্তু দেশের সম্পদকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে সরকার বাহাদুর। পাঠানো হয় ব্যংকক শহরে। একজন ব্যতিক্রমধর্মী মানুষ। দুঃখকে খুব বেশি ভালোবাসেন। দুঃখ নিয়েই বেঁচে থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু বেঁচে থাকতে পারেননি। ১৪ ই ডিসেম্বর ২০১৮ সাল। ব্যংককেই শেষ নিঃশেষ ত্যাগ করেন বাংলাদেশের সকল মানুষের চেনা নাম আমজাদ হোসেন।
আজ তাঁর ষষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক। কবর হোক আলোকিত। মহান খোদা তাকে ভূল ক্ষমা করে সবুজ বাগান দান করুক। আমিন.....