বোগদাদি পীরের সোহবতে ভাসানীর উত্থান।

মানুষের প্রতি বেশ যত্নবান চেগা মিয়া। আদর করে চেগা মিয়া ডাক বাবা মায়ের মুখ থেকে খুব অল্প সময় শুনতে পেয়েছেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে চেগা মিয়াকে এতিম রেখে দুনিয়া ছাড়েন মুহাম্মদ শরাফৎ আলী ও মজিরন বিবি নামে এই মুসলিম  দম্পতি। নির্মমতায় বেড়ে উঠা চেগা মিয়া এর কয়েক বছরের মধ্যে দুই ভাই ও একমাত্র বোনকেও হারায়।  


তারপর আর কি! যা হয় তা হয়েছে। অর্থসম্পদও হারায়। এতিম চেগা মিয়া সব হারিয়ে পথে প্রান্তরে ঘুরে। অনাহারে দিন কাটায়। পেটের ক্ষুধায় কাজ করে ক্ষেতে খামারে। কাজের জন্যে ঘুরে এই গ্রাম থেকে ওই গ্রাম। 

বোগদাদি পীরের সোহবতে ভাসানীর উত্থান।


ঘুরতে ঘুরতে একদিন দেখা মেলে ইরাক থেকে দাওয়াতি কাজে আসা বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক সাধক পীর সৈয়দ নাসির উদ্দীন বোগদাদির সাথে। দীর্ঘদিন এই পীর সাহেব হুজুরের সোহবতে থাকেন চেগা মিয়া। পীর সাহেব হুজুরও মুগ্ধ, চেগা মিয়ার আদব ও ভক্তি দেখে। পীর সাহেব পিতৃহারা চেগা মিয়াকে ছেলের মত করে আগলে নেন। 


এভাবে কিছুদিন যেতে জ্ঞানপিপাসু চেগা মিয়াকে পীর সাহেব হুজুর হুকুম দিলেন জ্ঞান হাসিল করার জন্যে বিখ্যাত মাদরাসা দারুল উলুম দেওবন্দ যেতে। পীরের হুকুম পালন করতে চলে গেলেন দেওবন্দ মাদরাসায়।


দেওবন্দ মাদরাসার আকাবিরগণের কাছ থেকে এলেম চর্চার পাশাপাশি চেগা মিয়া শেখতে শুরু করেন দখলদার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে। দেওবন্দ ছিল ব্রিটিশ বিরোধী। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর স্পষ্টভাবে জানতে পারেন দেওবন্দ থেকেই। দেওবন্দের মতাদর্শই চেগা মিয়াকে জোরালোভাবে প্রভাবিত করে। সেখান থেকেই তিনি পণ করেন ব্রিটিশ থেকে আমাদের ভূখন্ড রক্ষার। অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাজনীতি মুক্ত করার। 


দেওবন্দ শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি আবার চলে গেলেন আধ্যাত্মিক পীর হজরত নাসির উদ্দীন বোগদাদির কাছে। কিছুদিন সোহবতে থেকে চেগা মিয়া পীর সাহেব হুজুরের কাছে তার প্রতিজ্ঞার কথা পেশ করেন। 


তিনি ছোট থেকে এই পর্যন্ত মাজলুম মানুষদের খুব কাছ থেকে দেখেছেন। মানুষে মানুষে পার্থ্যকের চিত্র দেখেছেন। দেখেছেন ধনী গরীবের বৈষম্য। এমন দূর্ভিক্ষ পার করেছেন, যেখানে গরীবেরা ঘাস খায় অথচ রাজারা চেয়ে চেয়ে দেখে হাতে কোরমার প্লেট নিয়ে।


দরিদ্র কৃষকদের দূরাবস্থার চিত্র তাঁকে চরমভাবে বিচলিত করে। প্রজাদের উপর জমিদারদের  শোষণে তিনি ক্ষুব্ধ হন। এসব নিয়ে তিনি ভাবতে থাকেন। মাজলুমদের মুক্তির জন্য পথ খুঁজতে থাকেন। চিন্তা করতে থাকেন উপায়।


সব কিছু মিলিয়ে জমা করা বিষয়গুলো স্বীয় পীরের কাছে উপস্থাপন করেন এবং একই সাথে সংগ্রামে বেরিয়ে পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাগদাদের পীর সাহেবও অনুমতি এবং দোয়া করে দেন। পীরের এজাজত নিয়ে সেই থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চেগা মিয়া মাজলুমদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম ও লড়াই করে গেছেন। আপোষ করেননি কখনও কোনো শোষকের সাথে। যেখানে জুলুম সেখানেই উঁচু করেছেন তাঁর কন্ঠকে। 


প্রিয় বন্ধুগণ, এই চেগা মিয়াই আপনাদের প্রিয় মানুষ। জণগণ ও দেশের সম্পদ। বিদেশি সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক বিপ্লবী ও সংগ্রামী মানুষ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী (রহঃ)।


আজ মাওলানার ৪৮ তম মৃত্যু বার্ষিকী। তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক। মহান আল্লাহ্  তা'য়ালা তাঁর কবরকে আলোকিত করুক। হাশরের ময়দানে নবীজির শাফায়াত পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করুক। অনন্তকাল সবুজ উদ্যানে বাস করার তৌফিক দান করুক। আমিন ইয়া রব.....

 আমজাদ হোসাইন  

Amzad Hossain

I am Amzad Hossain, a writer who loves crafting stories, short stories, poetry, and features. My passion lies in weaving vivid imagery and deep emotions into narratives that captivate and resonate with readers. youtube facebook instagram twitter whatsapp external-link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন